মানুষের মস্তিষ্কের সমস্ত তথ্য বিস্তারিত | Human brain facts in bengali

মানুষের মস্তিষ্কের সমস্ত তথ্য বিস্তারিত 

প্রতিকি ছবি

আজ আমরা মানবদেহের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ মস্তিষ্কের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানবো, 

যেমন : (1) মস্তিষ্ক কি ? 

(2) মস্তিষ্কের কয়টি অংশ ও কি কি ? 

(3) মস্তিষ্কের তরলকে কি বলে ? ও সবশেষে 

(4) মস্তিষ্ক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। 

চলুন তবে একে একে জেনে নিই মস্তিষ্কের বিষয়ে বিস্তারিত। 

 মস্তিষ্ক কি ? 

মস্তিষ্ক হল আমাদের শরীরের সবচেয়ে জটিল অঙ্গমস্তিষ্ক আমাদের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অংশ এবং আমাদের চিন্তাভাবনা, অনুভূতি, আচরণ, স্মৃতি, এবং শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। 
মস্তিষ্কের কোষগুলি একে অপরের সাথে জটিল নেটওয়ার্ক তৈরি করে থাকে যা তথ্য প্রক্রিয়া করার এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অতি প্রয়োজনীয়। 
মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ বিভিন্ন কাজের জন্য দায়ী। উদাহরণস্বরূপ, 
মস্তিষ্কের সামনের অংশ চিন্তাভাবনা, সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং সমস্যা সমাধানের কাজ করে। 
মস্তিষ্কের পিছনের অংশ দেখা, শোনা এবং অনুভূতির কাজ করে। 
মস্তিষ্কের মাঝখানের অংশ আবেগ, স্মৃতি এবং শারীরিক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্ক আমাদের শরীরের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মস্তিষ্ক আমাদের জীবিত থাকার জন্য এবং সুস্থভাবে কাজ করার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 
তাই আমাদের মস্তিষ্কের যত্ন নেওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেমন  আমরা স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমানো এবং নিয়মিত ব্যায়াম করে আমাদের মস্তিষ্কের যত্ন নিতে পারি। 
আমাদের মানসিক চাপ কমাতে এবং আমাদের মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখার জন্যও কিছু পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। যেমন যোগ ব্যায়াম ও মেডিটেশন

মস্তিষ্ক সম্পর্কে এখনও আমরা অনেক কিছুই জানি না। বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কে কীভাবে কাজ করে তা আরও ভালভাবে বুঝতে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। 
এই গবেষণা আমাদের মস্তিষ্কের রোগগুলির চিকিৎসা উন্নত করতে এবং আমাদের মস্তিষ্কের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা বুঝতে সাহায্য করবে।

মস্তিষ্কের কয়টি অংশ ও কি কি ?

মানুষের মস্তিষ্ক তিনটি প্রধান অংশে বিভক্ত 

১. গুরুমস্তিষ্ক (Cerebrum): মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় অংশ, যা দুটি ভাগে বিভক্ত - বাম গোলার্ধ এবং ডান গোলার্ধ। এটি স্মৃতি, চিন্তা, শেখা, ভাষা, আবেগ, এবং অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করে।
২. লঘুমস্তিষ্ক (Cerebellum): মস্তিষ্কের পিছনের অংশে অবস্থিত। এটি ভারসাম্য, স্থানিক সচেতনতা, এবং সমন্বয় নিয়ন্ত্রণ করে।
৩. মস্তিষ্ককাণ্ড (Brainstem): মস্তিষ্কের নিচের অংশে অবস্থিত। এটি শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, এবং ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে।

এই তিনটি প্রধান অংশ ছাড়াও, মস্তিষ্কের আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ রয়েছে, যেমন:

থ্যালামাস: সংবেদনশীলতা (sensory information) নিয়ন্ত্রণ করে।
হাইপোথ্যালামাস: ক্ষুধা, তৃষ্ণা, ঘুম, এবং তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
পিটুইটারি গ্রন্থি: "master gland" হিসেবে পরিচিত, অন্যান্য অন্ত: স্রাবি গ্রন্থি (endocrine glands) কে নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্কের এই সকল অংশ একসাথে কাজ করে আমাদের শরীরের সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।

মস্তিষ্কের তরলকে কি বলে ?

মস্তিষ্কের তরলকে মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরল (cerebrospinal fluid) বলা হয়। 
এটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা একটি স্বচ্ছ, পানি-সদৃশ তরল। মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরলের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ রয়েছে:

মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে সুরক্ষা প্রদান: তরলটি মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডকে একটি বালিশের মতো কাজ করে, ঝাঁকুনি ও আঘাত থেকে রক্ষা করে।
বর্জ্য অপসারণ: মস্তিষ্ক তরল মস্তিষ্ক থেকে বিপাকীয় বর্জ্য পদার্থ অপসারণে সাহায্য করে।
পুষ্টি সরবরাহ: মস্তিষ্ক তরল মস্তিষ্কের কোষে পুষ্টি সরবরাহ করে।
মস্তিষ্কের চাপ নিয়ন্ত্রণ: মস্তিষ্ক তরল মস্তিষ্কের ভেতরের চাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।

মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরল মস্তিষ্কের ভেন্ট্রিকল (ventricles) নামক চারটি খোলা জায়গায় তৈরি হয়। তরলটি ভেন্ট্রিকল থেকে মস্তিষ্ক ও মেরুদণ্ডের চারপাশে অবস্থিত সাব-আরাকনয়েড স্পেস (subarachnoid space) নামক খোলা জায়গায় প্রবাহিত হয়।

মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরলের অস্বাভাবিকতা বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যার কারণ হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, হাইড্রোসেফালাস (hydrocephalus) হলো একটি অবস্থা যেখানে মস্তিষ্কের ভেতরে অতিরিক্ত তরল জমা হয়। 
অন্যদিকে, মস্তিষ্ক-সুষুম্না তরলের চাপ কমে গেলে স্পাইনাল ট্যাপ (spinal tap) নামক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

মস্তিষ্ক সম্পর্কে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য 

১. ওজন ও আকার

প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ১.৩-১.৪ কেজি।
যা একটি মানবদেহের মোট ওজনের মাত্র ২%।
মস্তিষ্কের আয়তন প্রায় ১২০০-১৬০০ ঘন সেমি।

২. গঠন

মস্তিষ্ক মূলত তিনটি অংশে বিভক্ত:
সেরিব্রাম: চিন্তা, স্মৃতি, জ্ঞান, ভাষা, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে
সেরিবেলাম: ভারসাম্য, সমন্বয়, ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে
মস্তিষ্ককাণ্ড: শ্বাস-প্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন, রক্তচাপ, ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে।

৩. কোষ

মস্তিষ্কে প্রায় ১০০ বিলিয়ন স্নায়ুকোষ (neurons) রয়েছে।
প্রতিটি স্নায়ুকোষ হাজার হাজার অন্যান্য কোষের সাথে সংযুক্ত।
স্নায়ুকোষের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান বিদ্যুৎ সংকেত ও রাসায়নিক বার্তাবাহকের মাধ্যমে ঘটে।

৪. কার্যকারিতা

মস্তিষ্ক মানবদেহের সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
মস্তিষ্ক চিন্তা, অনুভূতি, স্মৃতি, জ্ঞান, ভাষা, শেখা, ইত্যাদির জন্য দায়ী।
মস্তিষ্ক শরীরের বিভিন্ন ইন্দ্রিয় থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এবং সে অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানায়।

৫. রক্ত ​​প্রবাহ

মস্তিষ্ক শরীরের মোট রক্তের প্রায় ২০% গ্রহণ করে।
রক্ত ​​মস্তিষ্কে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে।

৬. রহস্য

মস্তিষ্কের অনেক রহস্য এখনও অজানা। বিজ্ঞানীরা এখনও পুরোপুরি বুঝতে পারেননি কিভাবে মস্তিষ্ক চিন্তা, স্মৃতি, ও অনুভূতি তৈরি করে।

৭. স্বাস্থ্য

মস্তিষ্কের সুস্থতা বজায় রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার, নিয়মিত ব্যায়াম, ও পর্যাপ্ত ঘুম প্রয়োজন।

" ধূমপান, মদ্যপান, ও মাদকদ্রব্য ব্যবহার মস্তিষ্ক তথা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। "

৮. আকর্ষণীয় তথ্য

মানুষের মস্তিষ্কের ক্ষমতা পুরোপুরি ব্যবহার করা হয় না এটা একটা মিথ।
বিজ্ঞানীরা প্রমান করেছেন, মানুষের মস্তিষ্কের মাত্র ১০% ব্যবহার করে এই ধারনা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন আরও জানতে ক্লিক করুন। 
মানুষের মস্তিষ্ক ডিএনএ-র তুলনায় অনেক বেশি জটিল।

ভালো লাগলে শেয়ার করুন ও আপনার মতামত কমেন্টে জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন