বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পর্কে 10টি আকর্ষণীয় তথ্য । Vande Bharat Express

বর্তমান সময়ের শতাব্দী এক্সপ্রেসের চেয়ে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেশি গতিতে চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন

Vande Bharat Express

সম্পূর্ণরূপে ভারতে নির্মিত, 
ভারতের প্রথম সেমি-হাই-স্পিড ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস। 

বর্তমানে সফল ভাবে নয়াদিল্লি থেকে বারাণসী পর্যন্ত চলছে ও মাত্র 8 ঘন্টায় নতুন বন্দে ভারত ট্রেনটি তার যাত্রা পথ অতিক্রান্ত করছে।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনকে সরকারি ভাষায়  "ট্রেন 18" নামেও ডাকা হয়। 

বন্দে ভারত ট্রেনটি সম্পূর্ণ  দেশীয় পদ্ধতিতে ডিজাইন ও তৈরি করা ট্রেন।এবঃ নিঃসন্দেহে এটি একটি অনন্য ট্রেন যা ভারতীয় রেলের ভ্রমণ প্রযুক্তিতে একটি নতুন যুগের সূচনা করবে।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের বেশ কয়েকটি অনন্য বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেমন বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট, ওয়াই-ফাই অনবোর্ড, সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় দরজা ইত্যাদি। 

2019 সালের বন্দে ভারতের জয় জয়কার এখন চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে।  

আমরা আজ আপনাকে 2019 সালে শুরু হওয়া ভারতের নতুন সেমি হাই কন্ডাক্টর ট্রেন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সম্পর্কে দশটি খুবই আনক্সপেক্টেড ফ্যাক্ট বা তথ্য জানাতে চলেছি।

আর্টিকেলটি পুরো মনোযোগ সহকারে পড়ুন আশা করি নতুন বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের বিষয় আপনি নতুন অনেক কিছুই জানতে পারবেন।

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস সম্পর্কে আকর্ষণীয় দশটি তথ্য

১. ট্রেনের ইঞ্জিন

ট্রেন 18 বা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ভারতের প্রথম ইঞ্জিনবিহীন ট্রেন। 

অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে এখনও অবধি, ভারতের ট্রেনগুলিতে একটি পৃথক ইঞ্জিন কোচ জুড়ে তারপর ট্রেনটিকে চালানো হয়।

কিন্তু ট্রেন 18 বা বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে বুলেট বা মেট্রো ট্রেনের মতো ইন্টিগ্রেটেড ইঞ্জিন রয়েছে। 

আলাদা করে কোন ইঞ্জিন কোচের দরকার পড়ে না।

আপনি কি জানেন?

যে ভারতীয় রেলওয়েতে একটি ইন্টারসিটি ট্রেন আছে যেটি অটোমেটিক? এই কারণে যাত্রাপথের সময় হ্রাস পাবে কারণ এই নতুন প্রযুক্তিটি খুবই দ্রুত গতি কম বা বেশি করতে পারে । 

বলা হচ্ছে যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস নয়াদিল্লি থেকে বারাণসী পর্যন্ত মাত্র 8 ঘন্টার মধ্যে যাত্রা কভার করবে।

 যা বর্তমান সময়ের শতাব্দী এক্সপ্রেসের চেয়ে অন্তত ৪-৫ ঘন্টা দ্রুততর করবে। বর্তমানে শতাব্দী এক্সপ্রেস দিল্লি থেকে বারানসি পর্যন্ত যাত্রা পথের জন্য সময় নেয় 12-13 ঘন্টা।

হাওড়া নিউ জলপাইগুড়ি বন্দে ভারত এক্সপ্রেস শুরু হচ্ছে ৩০ শে ডিসেম্বর ২০২২ দেখুন বিস্তারিত।

২. ট্রেনে খাবারের সুবিধা

ভারতের অন্যান্য সমস্ত এক্সপ্রেস ট্রেনে খাবারের ব্যবস্থা থাকে, এটা নতুন কিছু নয়।

কিন্তু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনে যদি আপনি কোথাও যাত্রা সফর করেন, তবে আপনার ট্রেনের টিকিটের মূল্য সাথেই খাবারের দাম ধরা থাকবে। এবং আপনি আপনার সময় মত আপনার চেয়ারে বসেই খাবার পেয়ে যাবেন।

আপনি যদি নয়াদিল্লি থেকে বারাণসী ভ্রমণ করেন, তবে আপনাকে ট্রেনে সকালের ব্রেকফাস্ট এবং দুপুরের খাবার পরিবেশন করা হবে। 

আপনি যদি বারাণসী থেকে নয়াদিল্লি আসেন তবে ট্রেনে আপনাকে চা জলখাবার এবং রাতের খাবার পরিবেশন করা হবে।

৩. সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় দরজা এবং এসি কোচ

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে  16টি সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত চেয়ার কার কোচ রয়েছে।

যেখানে আবার দুই ধরনের বসার বিভাগ আছে। প্লেনের মতো অনেকটা।

একটি হলো  ইকোনমি এবং আরেকটি এক্সিকিউটিভ ক্লাস। 

তবে আশ্চর্যজনক বৈশিষ্ট্য হল এক্সিকিউটিভ ক্লাসে ঘূর্ণায়মান চেয়ার রয়েছে যা 180 ডিগ্রি ঘুরতে পারে। 

মানে আপনি আপনার ইচ্ছামত আপনার বসার চেয়ার যেদিকে খুশি ঘুরিয়ে নিতে পারবেন কোন অসুবিধা নেই। এছাড়াও বন্দে ভারত এক্সপ্রেসে গুরুত্বপূর্ণ সুবিধাগুলির মধ্যে একটি হল স্লাইডিং ফুটস্টেপ সহ অটোমেটিক দরজা অনেকটা মেট্রো ট্রেনের মতোই।

৪. ট্রেনের গতি

বর্তমান সময়ের শতাব্দী এক্সপ্রেসের চেয়ে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা বেশি গতিতে চলবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেন।

বর্তমানে শতাব্দী এক্সপ্রেস ১৩০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় যাত্রা সফর করে, কিন্তু বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি ১৮০ কিলোমিটার প্রতি ঘন্টায় চলতে পারবে। 

কিন্তু বর্তমানে ইন্ডিয়ান রেলওয়ের বেশিরভাগ ট্রাকগুলি ১৩০ কিলোমিটারের বেশি গতিবেগে চালানোর উপযুক্ত নয়, বা বলা ভালো তৈরি নয়।

৫. অনবোর্ড ওয়াই-ফাই অ্যাক্সেস

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ব্যবহারকারীদের ইনফোটেইনমেন্টের( ইনফরমেশন এবং এন্টারটেইনমেন্ট) জন্য ইন্টারনেট পরিষেবা ব্যবহার করার জন্য অনবোর্ড ওয়াই-ফাই অ্যাক্সেস সরবরাহ করে। 

এছাড়াও, মোবাইল ফোন বা ট্যাবলেটে আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

৬. বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট

এক্সপ্রেস ট্রেনের টয়লেটের একটি বড় সমস্যা রয়েছে। সাধারণ যাত্রীরা প্রায়ই সেই সব সমস্যার সম্মুখীন হয়।

তাই ট্রেনে স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানের জন্য বন্দে ভারতে বায়ো-ভ্যাকুয়াম টয়লেট এর ব্যবস্থা করা হয়েছে, সঙ্গে ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য দুই ধরনেরই ব্যবস্থা আছে।

এক কথায় বলতে গেলে যেমনটা আমরা এরোপ্লেনের টয়লেটে দেখতে পাই অনেকটা সেই রকমই বন্দে ভারতে দেখতে পাবো। এবং এই ব্যবস্থা যাত্রীদের একটি সুন্দর অনুভূতি দেবে।

৭.  উন্নত জিপিএস সিস্টেম

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে জিপিএস ভিত্তিক উন্নত যাত্রী তথ্য ব্যবস্থাও রয়েছে যা আপনাকে আসন্ন স্টেশন এবং তথ্য সম্পর্কে সব সময় আপডেট করবে।

৮. ট্রেনের খরচ আমদানির খরচের অর্ধেক

ICF অনুসারে, ট্রেন 18-এর উৎপাদন খরচ, আমদানি করা ট্রেন সেটের প্রায় অর্ধেক এবং 'মেক ইন ইন্ডিয়া'-এর অধীনে তৈরি করা হয়েছে। কোচ প্রতি গড় খরচ হবে প্রায় ৬ কোটি টাকা। এছাড়াও, বলা হচ্ছে যে যখন ট্রেইলটির ব্যাপক উত্পাদন শুরু করা হবে তখন খরচ প্রতি কোচে 5 কোটি টাকার কাছাকাছি আসবে।

৯. ট্রেনে স্মার্ট নিরাপত্তা

বন্দে ভারত ট্রেনের সবকটি বগিতেই সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে, যাতে যাত্রীদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দেওয়া যায় । 

তাই আপনার আর কোন চিন্তা নেই। কারণ বন্দে ভারত ট্রেনে আপনার জিনিস খোয়া যাবেনা। এটু অন্তত নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে।

সঙ্গে থাকছে ট্রেনের স্বয়ংক্রিয় দরজা যা তখনই খুলবে যখন ট্রেনটি পুরোপুরি থামবে। 

এবং যখন দরজা পুরোপুরি বন্ধ হবে তখনই ট্রেনটি চলতে। পারবে এমন ভাবেই টেকনোলজি তৈরি করা হয়েছে।

১০. ট্রেনে প্রতিবন্ধীদের খুব ভালো বন্দবস্ত করা হয়েছে

বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনের কিছু কোচে হুইলচেয়ার পার্ক করার জন্য জায়গা থাকবে, যাতে প্রতিবন্ধীদের কোনও ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে না হয়।


অন্যান্য কিছু বৈশিষ্ট্য হল


  •  ট্রেনটিকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে যাত্রীরা চালকের কেবিন দেখতে পারেন।
  •  লাগেজের জন্য প্রতিটি কোচে মডুলার র‌্যাক রয়েছে এবং গতিমান এক্সপ্রেসের মতো অন্যান্য ট্রেনের তুলনায় আরও বড় করা হয়েছে।
  • ট্রেনের প্যান্ট্রিতে খাবার এবং পানীয় গরম এবং ঠান্ডা করার জন্য উন্নত মানের সরঞ্জাম রয়েছে। যাতে খাবার সমানভাবে গরম হয়।
  • মোবাইল বা ল্যাপটপ সহজেই চার্জ করার জন্য প্রতিটি কোচে সকেট রয়েছে। এই সকেটগুলি একটি সুবিধাজনক ভাবে আসনের নীচে লাগানো হয়।
  • এমনকি, কোচ মধ্যে ফাঁক সম্পূর্ণরূপে সিল করা হয়।  এটি বাহ্যিক শব্দ কমাতে সাহায্য করে।
  • ট্রেনের কোচে রিডিং লাইটসহ টাচ কন্ট্রোল দেওয়া আছে।
  • কম্পিউটারাইজড এরোডাইনামিক ড্রাইভারের কেবিন আছে।
  •  উন্নত LED লাইট।
  • স্বয়ংক্রিয় সেন্সর ট্যাপ।
  • এটি সম্পূর্ণরূপে ভারতে ইন্টিগ্রাল কোচ ফ্যাক্টরি, চেন্নাই তে তৈরি।


সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ট্রেনটি সম্পূর্ণরূপে ভারতীয় তৈরি। নতুন প্রযুক্তি চালিত ট্রেন যা সর্বাধিক সুবিধা ও বিশ্বমানের অনুভূতি দিতে প্রস্তুত।

আপনি আরও দেখতে পারেন 


কেমন লাগলো কমেন্টে জানান, এবং বন্ধু ও পরিবারের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
আমাদের facebook page লাইক করে সঙ্গে থাকুন। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন