খাওয়ার আগে জেনে নিন পেয়ারার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা | fanfact.in

০০ টিরও বেশি প্রজাতির পেয়ারা আছে।

 

পেয়ারার কিছু উপকারিতা ও অপকারিতা

পেয়ারা সাধারণত  সবুজ ও লাল রঙে পাওয়া যায়। তবে প্রায় ১০০ টিরও বেশি প্রজাতির পেয়ারা আছে। ধারণা করা হয় ১৭শ শতাব্দীতে পেয়ারা প্রথম ভারতবর্ষে আসে। একটি পেয়ারার পুষ্টিগুণ কমলালেবুর ৪ গুণ বেশি। পেয়ারার মধ্যে যেসকল পুষ্টিগুণ রয়েছে তা হলো জল, প্রোটিন, ফসফরাস, সোডিয়াম, ভিটামিন, ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, খনিজ লবন এবং সেচুরেটেড ফ্যাটি এসিড। পেয়ারা ফলই শুধু উপকারী তা কিন্তু  নয় পেয়ারা পাতারও অনেক গুণ রয়েছে। পেয়ারা পাতার রস ক্যান্সারের প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করে  , সংক্রমণ রোধ করে। এছাড়া প্রদাহ, ব্যথা, জ্বর, বহুমূত্র, আমাশয় প্রভৃতি রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। স্বাদ, পুষ্টি ও স্বাস্থ্যে এই তিনটি জিনিসই পেয়ারায় বিদ্যমান। সুস্বাস্থ্যের জন্য  প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখতে পারেন, তাতে যে আপনার উপকারই হবে তাতে কোনো শন্দেহ নেই।  দেশী ফলগুলোর মধ্যে পেয়ারা বেশ পরিচিত এবং জনপ্রিয় একটি ফল। সাধারণ এবং সহজলভ্য এই ফলটির পুষ্টিগুণ অনেক। পেয়ারা কাচা অবস্থায় ফল হিসাবে,  পেয়ারা জেলী, অথবা মাখা করে নানভাবে খাওয়া যায় মজাদার এই ফলটি। শুধু ফলই নয়, পেয়ারা পাতায়ও রয়েছে নানা পুষ্টিগুণ। আজ আমরা জেনে নিই পেয়ারার কয়েকটি উপকারিতা।



পেয়ারার উপকারিতা

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি : পেয়ারাতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন সি রয়েছে। যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা ইমুইনিটি  বৃদ্ধি করে এবং শরীরের যে কোনও রকম ইনফেকশন হওয়া থেকে সুরক্ষা দেয়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে: ডায়াবেটিস রোগের ক্ষেত্রে খুব কাজ দেয় পেয়ারা। পেয়ারার রসে থাকা উপাদান ডায়াবেটিস মেলিটাসের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। ডায়াবেটিস প্রতিরোধে পেয়ারা পাতাও বেশ কার্যকরী।

পেটের সমস্যার সমাধান : খাবারের রুচি আনে। কোষ্ঠকাঠিন্য কমায়, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে পেয়ারা। পেয়ারাতে আছে প্রচুর ফাইবার। আর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে আর তাই কারো কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে পেয়ারা খেয়েই করতে পারেন আপনার সমস্যার সমাধান।

রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে: পেয়ারা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পেয়ারাতে থাকে পটাশিয়াম যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।আর  রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রেখে হৃদরোগের সম্ভাবনাও কমায়।

ক্যানসার প্রতিরোধ করে: পেয়ারাতে লাইকোপিন, ভিটামিন সি, কোয়ারসেটিন এর মতো অনেকগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান রয়েছে যা শরীরের ক্যান্সারের প্রতিরোধ গড়ে তোলে। এটি প্রোস্টেট ক্যান্সার এবং স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।

ঠান্ডা জনিত সমস্যা দূর করতে : শ্বাস কষ্ট, ঠাণ্ডা লাগা, সর্দি কাশিতে প্রতিরোধ গড়ে তোলে পেয়ারা।কারন প্রথমেই বলেছিলাম ইমুইনিটি বাড়াতে পেয়ারা সাহায্য করে তাই বিভিন্ন ঠান্ডাজনিত সমস্যা যেমন ব্রংকাইটিসের প্রতিরোধ করে পেয়ারা। আয়রন এবং ভিটামিন সি থাকায় পেয়ারা শ্লেষ্মা কমিয়ে দেয়।


দৃষ্টিশক্তি বাড়ায়: ভিটামিন এ চোখের জন্য উপকারী। পেয়ারাতে থাকা ভিটামিন এ কর্নিয়াকে সুস্থ রাখে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পেয়ারা রাখুন। পেয়ারায় থাকা প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ চোখের জ্যোতি বাড়ায়। চোখ সুস্থ রাখে।

ত্বক ও চুলের পরিচর্যা করে : পেয়ারায় প্রচুর পরিমাণে জল থাকে যা ত্বক আর চুল ভালো রাখতে আর সুন্দর করতে সাহায্য করে। রুক্ষতা দূর করে। দীর্ঘদিন  তারুণ্য ধরে রাখে।

স্ট্রেস দূর করে: স্ট্রেস দূর করতে দারুণ ভালো কাজ দেয় পেয়ারা। পেশি আর স্নায়ুর কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। চাপ কমায়, শক্তি বাড়ায়।

হার্টকে সুস্থ রাখে: পেয়ারা রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা কমায় যার ফলে হার্টের অসুখ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কমে যায়।রক্তে চর্বি কম জমে এর ফলে। পেয়ারা হার্টকে সুস্থ রাখায় সাহায্য করে। আপেল সম্বন্ধে 7টি মজাদার এবং অবিশ্বাস্য তথ্য (অবশ্যই পড়ুন )

মস্তিকে রক্ত সঞ্চালনে সহায়তা করে: পেয়ারাতে পাওয়া যায় ভিটামিন বি৩ এবং ভিটামিন বি৬ যা কিনা ব্রেনের রক্ত সঞ্চালনকে ভাল রাখতে সাহায্য করে।

শিশুদের মস্তিষ্ক উন্নত করে: পেয়ারাতে আছে ফলিক এসিড আর ফলিক এসিড একজন গর্ভবতী মায়ের জন্য খুবই প্রয়োজন।সব গর্ভবতীদেরই ডাক্তাররা ফলিক এসিড দিয়ে থাকেন কারণ এটি বাচ্চার নার্ভাস সিস্টেমকে উন্নত করে। আর সেই সাথে এটি বাচ্চাদের নিউরোলোজিক ডিজঅর্ডার থেকে দুরে রাখে।

মুখের ভিতরের সাদা দাগ দূর করে: অনেকেরই মুখের ভেতর সাদা দাগের মত একটি আলসার দেখা যায় আর এটি হয়ে থাকে ভিটামিন সি এর অভাবে, তাই পেয়ারা খেলে এটি হওয়া অনেকটা কমে যায়।

বয়সের ছাপ কমায়ঃ মানুষ যতই সুন্দর হোক না কেন বয়সের সাথে সাথে সবার চামড়াতেই বয়সের একটা ছাপ পড়ে। প্রকৃতির এই নিয়মকে কখনই ঠেকানো যায়না কিন্তু আমরা বয়সের এই ছাপ পড়াকে একটু আটকাতে পারি এন্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি যুক্ত ফল খেয়ে যা কিনা আমাদের ত্বকের পুনর্গঠনে ভুমিকা রাখে। আর আপনি তো জানেন পেয়ারাতে ভিটামিন সি ও এন্টিঅক্সিডেন্ট প্রচুর আছে।

ওজন কমাতে সাহায্য করে: পেয়ারাতে গ্লুকোজের পরিমাণ কম থাকে আর তাই ওজন কমানোতে পেয়ারা বেশ উপযোগী।তাছাড়া শরীরের বাড়তি মেদ কমাতে অত্যন্ত কার্যকরী গ্রিন টি পড়তে পারেন। 

বুদ্ধি বৃদ্ধিতে: শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে শিশুদের বুদ্ধি বিকাশে পেয়ারার সব চাইতে বেশি কার্যকরী। পেয়ারায় রয়েছে ভিটামিন বি৩ ও নিয়াসিন যা মস্তিষ্কের রক্ত সঞ্চালনের ভারসাম্য বজায় রাখে ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বাড়ায়। পেয়ারার ভিটামিন বি৬ ও পিরিয়ডক্সিন মস্তিষ্কের নার্ভের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

মেটাবলিজম বাড়ায়ঃ সুস্থ থাকার জন্য ও এনার্জেটিক থাকার জন্য আমাদের একটি স্বাস্থ্যকর মেটাবলিক সিস্টেম থাকা দরকার। পেয়ারায় প্রচুর ডায়েটারি ফাইবার ও এন্টি অক্সিডেন্ট আছে যা কঠিন প্রট্রিনকে ভেঙ্গে আমাদের শরীরে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। এটি আমাদের মস্তিস্কের কার্যক্ষমতাও বৃদ্ধি করে দেয়।

পেয়ারার অপকারিতা

প্রত্যেক ভালো জিনিসেরই কিছু না কিছু অপকারিতা রয়েছে। তেমনি পেয়ারারও রয়েছে। যে কোন কিছু মাত্রাতিরিক্ত খেলে তার কিছু পার্শপ্রতিক্রীয়া বা অপকারীতাও থাকবে। পেয়ারার কয়েকটি অপকারিতা দেখে নিই।

পেট ফাপাঃ  পেয়ারা একটি উচ্চ ফ্রুক্টোজ সমৃধ ফল। অধিক পরিমাণে পেয়ারা খেলে এর খনিজ এই উপাদানটি আমাদের এবং সাথে কিছু ব্যাক্টেরিয়া মিলে পেটে গ্যাস উতপন্ন করে এবং পেট ফাপা অনুভূত হয়।

ব্যাকটেরিয়াঃ অন্যান্য যে কোন ফলের মতো পেয়ারাতেও ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রামণ হয়। বিশেষ করে যদি ফাটা বা ক্ষতিগ্রস্থ পেয়ারা থাকে তবে তাতে ব্যাক্টেরিয়ার দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই পেয়ারার খোসা ফেলে দিয়ে খাওয়া ব্যাক্টেরিয়ার উপদ্রব থেকে অনেকটা রেহাই দিতে পারে।

ডাইরিয়া এবং পেটের পীড়াঃ উচ্চ মাত্রার ফ্রুক্টজ হজম করতে না পারার কারনে অনেক সময় ডাইরিয়া এবং পেটব্যাথা হতে পারে। আর পেয়ার ভিতরের অংশে অনেক বীজ থাকে। এই অংশটি আমাদের পেটে কখনোই ঠিক মত হজম হয়না। তাই অধিক পেয়ারা খেলে পেট ব্যাথা এবং পেট খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

সুগার বৃদ্ধিঃ অধিক পেয়ারা খেলে আপনার ব্লাড সুগার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। আর পাশাপাশি পেয়ারাতে খুবই কম  প্রোটিন এবং ফ্যাট  থাকায় আপনি পেট ভরে পেয়ারা খেলেও একটু পর দেখবেন আপনার আবার ক্ষুধা পেয়ে যাচ্ছে। কারন শরীরে প্রোটিনের অভাব থেকেই যায়।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন