বিষকন্যাদের ইতিহাস ? | History of vishakanya in bengali

বিষকন্যা - কল্পনা, না সত্যি ?  বিষকন্যাদের ইতিহাস?

প্রতিকি ছবি

আজ আমরা সফর করবো ইতিহাসেরের এমন এক অধ্যায় যে জগতের বিষয়ে সঠিক ও বিস্তারিত খুব একটা জানা যায় না। একদিকে অতি সুন্দরী কামিনী নারী অন্যদিকে তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড।  রাজনৈতিক ও সামাজিক কুটচালের বেড়াজালে আটকে থাকা বিষকন্যাদের ইতিহাস। হ্যাঁ আজ আমাদের আলোচনার বিষয় - বিষকন্যা ও তাদের ইতিহাস 

অপরূপ রূপের রানী, কিন্ত হৃদয়ের পাষাণ,  বিষকন্যাদের কথা মনে হলেই চোখের সামনে এমনি কিছু একটা ছবি ভাসে, তাই না? 
সুন্দরী নারী, যাদের ঠোঁটের স্পর্শেই মৃত্যু ! 

কিন্তু কতটা সত্যি এই সব কাহিনী? বিষকন্যারা কি আদৌ ছিলেন? না কি কেবলই লোককথা ও কল্পকাহিনীর জগতের বাসিন্দা তারা ?

ইতিহাসের পাতা খুঁজলে বিষকন্যাদের সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না। তবে ধারনা করা হয় মৌর্য্য যুগ (খ্রিস্টপূর্ব ৩২২ - ১৮৫) থেকেই বিষকন্যাদের গল্প প্রচলিত। রাজ দরবারের গোপন কাজ, শত্রুদের গতিবিধি নিয়ে গুপ্তচরবৃত্তি, কিংবা রাজার আদেশে শত্রু বধ - এসব কাজে বিষকন্যাদের দক্ষতা অপরিসীম বলে বিশ্বাস করা হত।

কিন্তু কীভাবে তৈরি হত এই বিষকন্যা

শিশু বয়স থেকেই নির্মম অত্যাচার ও  চরম কষ্টের মধ্যে দিয়ে তাদের তৈরি করা হতো। নিয়মিত তাদের শরীরে প্রবেশ করানো হতো বিষ। দেওয়া হত  বিষ মেশানো খাবার। অনেক শিশুই এর মধ্যে থেকে মারা যেত। যারা এই সব অত্যাচার ও বিষ খেয়ে টিকে থাকতো, তাদের তারপর শিক্ষা দেওয়া হতো  বিষের প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলা, যুদ্ধকৌশল, অস্ত্রচালনা এসব বিষয়ে। পাশাপাশি বিষকন্যাদের রাজনৈতিক কূটচাল বা মোহময়ী অঙ্গ ভঙ্গি জানাটাও ছিল বাধ্যতামূলক। 

বিষকন্যাদের এই রহস্যময় চেহারা কতটা সত্যি, আর কতটা কল্পনা, তা নিয়ে এখনও পর্যন্ত ধন্দ রয়েছে। 

তবে, সাহিত্য, কবিতা, লোকগীতি - সর্বত্রই বিষকন্যাদের কথা বারে বারে উঠে এসেছে। সেটা শরবিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় হোক বা চার্নক্য হোক । এমনকি চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য্যের 'বিষকন্যা' বাহিনীর কথাও ইতিহাসে শোনা যায়। 

রাজা চন্দ্রগুপ্তের আশেপাশে সর্বদা থাকা এই বিশেষ দলের মধ্যে শুধুমাত্র  বেশ্যা বা  সুন্দরী নারী ই না, থাকতেন খুবই দক্ষ মহিলা  যোদ্ধা ও বিষকন্যাদের একটি দল। 

আজ বিষকন্যারা কোথায় ? 

আমরা উপরে  বিষকন্যাদের রহস্যময় ইতিহাসের কিছু কথা জেনেছি। কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় - এই বিষকন্যারা হারিয়ে গেলেন কেন? আর তাদের উত্তরাধিকার বা বংশধর কারা ?

বিষকন্যাদের বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ

যুগের পরিবর্তন: যুদ্ধের কৌশল বদলাতে থাকায় বিষকন্যাদের চাহিদা কমে যেতে থাকে। বন্দুক ও কামানের যুগে গিয়ে গুপ্ত হত্যার চেয়ে সশস্ত্র যুদ্ধই বেশি গুরুত্ব পায়।
নৈতিকতা ও মানবিকতা:  রাজনৈতিক নৈতিকতা আর মানবিকতার চেতনা বৃদ্ধির সাথে সাথে গোপনে বিষ প্রয়োগের মতো কাজ সমাজে কুৎসিত ও কলঙ্কিত হিসেবে দেখা হতে থাকে।
গুপ্তচরবৃত্তির নতুন উপায় : প্রযুক্তির উন্নতির ফলে গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে নতুন পদ্ধতি, যেমন গোয়েন্দা বাহিনী বা  যন্ত্রের প্রচলন বৃদ্ধি পায়।

তাহলে বিষকন্যাদের উত্তরাধিকার কোথায় ?

যদিও বিষকন্যারা আর নেই, তবু তাদের কিছু উত্তরাধিকার আজও রয়ে গেছে:

যেমন 
  • গোয়েন্দা বাহিনী গঠনে কিংবা গুপ্ত তথ্য সংগ্রহে বিষকন্যাদের প্রশিক্ষণ পদ্ধতির কিছু অংশ আজও ব্যবহার করা হয়। 
  • বিষকন্যারা যে বিষ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতেন, তা আয়ুর্বেদ সহ বিভিন্ন বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে বিষ বা বিষের  প্রতিষেধক আবিষ্কারে অনেক অবদান রেখেছে। 
  • এবং সর্বপরি বিষকন্যারা লোককাহিনী, কবিতা, নাটক সহ বাংলা সাহিত্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তারা রহস্যের প্রতীক হিসেবে আজও আমাদের কল্পনাশক্তিকে জাগিয়ে রাখে।
শেষকথা : বিষকন্যারা - কল্পনা, না ইতিহাস? ধন্দ থাকলেও, একথা নিঃসন্দেহ যে, তারা ইতিহাসের এক রহস্যময় অধ্যায়। তাদের গল্প আমাদের মনে আজও রোমাঞ্চ এবং কৌতূহল জাগিয়ে দেয়। বিষকন্যাদের নিয়ে আপনার মতামত আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানান।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন