শচীন টেন্ডুলকার : পরিবার, রাজনীতি, সম্পত্তি, রেকর্ড ও তথ্য | Sachin Tendulkar in bengali

তিনি মোটামোটি 10 কোটি টাকা চার্জ করেন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারাভিযান (ads campain) করতে। তবুও তিনি সমাজের জন্য খারাপ এমন বিজ্ঞাপন থেকে নিজেকে বিরত রাখেন,

ভারতের সর্বকালের অন্যতম সেরা ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার। 

শচীন তেন্ডুলকর 


পুরো নাম:  শচীন রমেশ তেন্ডুলকর

জন্মতারিখ:  24 এপ্রিল, 1973

জন্ম স্থান:  মুম্বই, মহারাষ্ট্র, ভারত

ব্যাটিং স্টাইল:  ডানহাতি ব্যাটসম্যান

বোলিং স্টাইল:  ডানহাতি মিডিয়াম, ডানহাতি অফ ব্রেক

টেস্ট অভিষেক:  1989 সালের 15 নভেম্বর করাচিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে

ওয়ানডে অভিষেক:  18 ডিসেম্বর, 1989, গুজরানওয়ালায় পাকিস্তানের বিরুদ্ধে

টি-টোয়েন্টি অভিষেক:  এই ফর্ম্যাট চালু হওয়ার আগেই তাঁর আন্তর্জাতিক কেরিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ায় টি-টোয়েন্টি খেলেননি সচিন।

আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার:  সচিন তেন্ডুলকর 1989 থেকে 2013 সাল পর্যন্ত ভারতীয় জাতীয় ক্রিকেট দলের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

টেস্ট ম্যাচ:  সচিন 200টি টেস্ট ম্যাচ খেলেছেন, যা অবসরের সময় কোনও ক্রিকেটারের কাছে সবচেয়ে বেশি।

একদিনের আন্তর্জাতিক (ODIs):  463 ODIs ম্যাচ খেলে ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তিনি।

শচীন তেন্ডুলকর এর পরিবার ও প্রাথমিক জীবন 

শচীন টেন্ডুলকার ভারতের মহারাষ্ট্রের মুম্বাইয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। 

এখানে তার পরিবার সম্পর্কে কিছু বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হলো:

পিতা:  রমেশ তেন্ডুলকর

রমেশ তেন্ডুলকর একজন বিখ্যাত মারাঠি ঔপন্যাসিক এবং কবি হিসাবে কাজ করেছিলেন।

তিনি মুম্বাইয়ের কীর্তি এম ডুঙ্গুরসি কলেজ অফ আর্টস, কমার্স অ্যান্ড সায়েন্সের একজন প্রশংসিত অধ্যাপকও ছিলেন।

মাতা:  রজনী তেন্ডুলকর

রজনী তেন্ডুলকর বিমা কোম্পানিতে পেশায় কাজ করতেন।

শচীনের ক্রিকেট যাত্রাকে সমর্থন করা, তার প্রয়োজনের প্রতি খেয়াল রাখা এবং উত্সাহ প্রদানে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ভাই :

শচীন তেন্ডুলকরের দুই বড় সত্ ভাই এবং এক ছোট সত্ বোন রয়েছে।

নীতিন তেন্ডুলকর: 

নিতিন একজন ব্যবসায়ী  এবং ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন প্রায়ই শচীনকে সমর্থন করতে দেখা যেতো।

অজিত তেন্ডুলকর: 

শচীনের ক্রিকেট কেরিয়ারের গোড়াপত্তন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন অজিত তেন্ডুলকর। ক্রিকেটার হিসেবে শচীনের উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনকারী প্রখ্যাত কোচ রমাকান্ত আচরেকরের সঙ্গে শচীনের পরিচয় করিয়ে দেন তিনি।

বোন :

সবিতা তেন্ডুলকর: সচিন তেন্ডুলকরের ছোট বোন সবিতা। তার সম্পর্কে খুব বেশি তথ্য পাওয়া যায় না।

স্ত্রী:  অঞ্জলি তেন্ডুলকর

শচীন টেন্ডুলকার অঞ্জলি তেন্ডুলকারকে বিয়ে করেছেন। 1995 সালের 24 মে তাদের বিয়ে হয়। অঞ্জলি সারা কেরিয়ার জুড়েই শচিনের পাশে থেকেছেন। 

সন্তান :

শচীন ও অঞ্জলি তেন্ডুলকরের দুটি সন্তান রয়েছে

 অর্জুন তেন্ডুলকর

1999 সালের 24 সেপ্টেম্বর জন্ম নেওয়া অর্জুন তেন্ডুলকর বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করে ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেন।

তিনি একজন বাঁ-হাতি অলরাউন্ডার এবং মুম্বইয়ের হয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে খেলেন।

সারা তেন্ডুলকর

1997 সালের 12 অক্টোবর জন্ম নেওয়া সারা তেন্ডুলকর অন্য পথ বেছে নিয়েছেন। ক্রিকেটকে কেরিয়ার হিসেবে বেছে নেননি।

তিনি তার পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং পাবলিক স্পটলাইট থেকে দূরে রয়েছেন।

বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী ও সন্তানদের পাশে থেকে সচিনের সাফল্যে অবদান রাখার জন্য তাঁর ক্রিকেট যাত্রায় পরিবার সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ সাপোর্ট সিস্টেম হিসেবে কাজ করেছে।

রাজনীতি

শচীন তেন্ডুলকর কোনোদিনই রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত ছিলেন না। 

তবে, 2012 সালের এপ্রিলে রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাতিল সচিন তেন্ডুলকরকে রাজ্যসভায় মনোনীত করেন, যা ভারতের সংসদের উচ্চকক্ষ। এই ঐতিহাসিক মনোনয়ন তাঁকে প্রথম সক্রিয় খেলোয়াড় ও ক্রিকেটারের সঙ্গে একজন সম্মানজনক এমপি  পদের অধিকারী করে তোলে। 

ঐ বছরের 4ঠা জুন তেন্ডুলকর আনুষ্ঠানিকভাবে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।

উল্লেখ্য, সচিন তেন্ডুলকর নয়াদিল্লিতে তাঁর জন্য বরাদ্দ বাংলোটি বাতিল করে নিজের নম্রতা ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছিলেন। তিনি এটি অপ্রয়োজনীয় মনে করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে এটি করদাতাদের অর্থের অপব্যবহার হবে, কারণ তাঁর প্রাথমিক বাসভবন ছিল মুম্বাইতে। এই সিদ্ধান্ত তাঁর মিতব্যয়িতা এবং সরকারি সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়।

শচীন তেন্ডুলকর এর সম্পত্তি

শচীন তেন্ডুলকরের সম্পত্তির পরিমাণ  2023 সালের হিসাব অনুযায়ী প্রায় 1,250 কোটি টাকা (160 মিলিয়ন মার্কিন ডলার)। তিনি ক্রিকেটের জগতে সবচেয়ে ধনী ক্রিকেটার এবং বিশ্বের অন্যতম ধনী অ্যাথলিট। টেন্ডুলকারের এই সম্পদ তার ক্রিকেট, ব্রান্ড এনডোর্সমেন্ট, বিনিয়োগ, সহ বিভিন্ন উত্স থেকে আয় করেছেন ।

তেন্ডুলকরের উল্লেখযোগ্য ক্রিকেটার হওয়ার পাশাপাশি তাঁর  ব্রান্ড এনডোর্সমেন্টও উল্লেখযোগ্য। 

তিনি পেপসি, রিলায়েন্স, এমআরএফ, এডিডাস সহ বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন করেছেন। 

মুম্বইয়ে একটি বিলাসবহুল বাড়িও রয়েছে তেন্ডুলকরের।এনডোর্সমেন্টের পাশাপাশি বিনিয়োগ ও সম্পত্তির মাধ্যমেও অর্থ উপার্জন করেছেন টেন্ডুলকার।

শচীন তেন্ডুলকরের একটি রেস্তোরাঁ ও স্পোর্টস অ্যাকাডেম-সহ বেশ কিছু সফল  ব্যবসা রয়েছে।

তিনি ভারতের জাতীয় আইকন, বিশ্বের ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে তিনি অত্যন্ত শ্রদ্ধার ও সমাদৃত। তাই যে কোনও এনডোর্সমেন্ট চুক্তি তার জন্য অতি লাভজনক ও সহজ উপায় টাকা রোজগার করার। তিনি মোটামোটি 10 কোটি টাকা চার্জ করেন একটি বিজ্ঞাপন প্রচারাভিযান (ads campain) করতে।

তবুও তিনি সমাজের জন্য খারাপ এমন বিজ্ঞাপন থেকে নিজেকে বিরত রাখেন, যেমন অ্যালকোহল, বা ধূমপান জাতীয় বিজ্ঞাপন।


শচীন টেন্ডুলকার যেসব ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপন দিয়েছে তার মধ্যে কিছু জনপ্রিয় কম্পানী হলো পেপস, রিলায়েন্স, এমআরএফ, এডিডাস, ক্যানন, এয়ারটেল, ব্রিটানিয়া, এইচডিএফসি ব্যাঙ্ক, ভিসা ইত্যাদি।

শচিন তেন্ডুলকরের কেরিয়ারের সাফল্য ও রেকর্ড সহ তাঁর সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য এখানে তুলে ধরা হল

প্রধান সাফল্য:

1. টেস্ট ক্রিকেটে 15 হাজার 921 রান করে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক।

2. ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ 18,426 রান।

3. প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ODIs রানে 10 হাজার রান করেন।

 4. টেস্ট ও ওয়ানডে ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির (51 টেস্ট সেঞ্চুরি ও 49 ওয়ানডে সেঞ্চুরি) রেকর্ড রয়েছে।

5. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে একশোটি শতরান করা একমাত্র ক্রিকেটার।

6. 1997 সালে উইজডেন কর্তৃক বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন।

7. ভারতের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান রাজীব গান্ধী খেলরত্ন পুরস্কার (1997-1998) প্রাপক।

8. ভারত সরকার কর্তৃক পদ্মশ্রী (1999) এবং পদ্মবিভূষণ (2008) লাভ করেন।

9. 2019 সালে আইসিসি ক্রিকেট হল অব ফেমে অন্তর্ভুক্ত হন।

ঘরোয়া কেরিয়ার: 

ভারতের ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বইয়ের হয়ে খেলেছেন সচিন তেন্ডুলকর।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ (আইপিএল): 

2008 থেকে 2013 পর্যন্ত মুম্বই ইন্ডিয়ান্সের হয়ে আইপিএল খেলেছেন সচিন। খেলোয়াড়ী জীবন থেকে অবসর নেয়ার পর দলের অধিনায়ক ও মেন্টরের দায়িত্ব পালন করেন।

অবসর : 

2013 সালের 16 নভেম্বর মুম্বইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে 200th রানের টেস্ট ইনিংস খেলে ক্রিকেট থেকে অবসর নেন শচিন।


শচীন তেন্ডুলকর সম্পর্কে কিছু আকর্ষণীয় তথ্য এখানে রয়েছে:

1. টেস্ট ও ওয়ান ডে ক্রিকেটে সর্বকালের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক সচিন তেন্ডুলকর। 

200 টেস্টে 15,921 রান ও 

463 ওয়ানডেতে 18,426 রান করেছেন তিনি।

2. বিশ্বকাপ ক্রিকেটে সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যানের তকমাও রয়েছে সচিনের ঝুলিতে। 

বিশ্বকাপে 24 ম্যাচে 4টি সেঞ্চুরি ও 6টি হাফসেঞ্চুরিসহ 2 হাজার 278 রান করেছেন তিনি।

3. আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে 100টি শতরান রয়েছে সচিন তেন্ডুলকরের। 

14 নভেম্বর, 2013 তারিখে কলকাতার ইডেন গার্ডেন্সে বাংলাদেশের বিপক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে তিনি এই কৃতিত্ব অর্জন করেন।

4. ভারতের সর্বোচ্চ নাগরিক সম্মান ভারতরত্ন পেয়েছেন সচিন তেন্ডুলকর। ক্রিকেটে অসামান্য অবদানের জন্য 2014 সালে তাঁকে এই সম্মানে ভূষিত করা হয়।

5. অঞ্জলি মেহতা(তেন্ডুলকরে ) ও শচকন তেন্ডুলকরের দুটি সন্তান রয়েছে,  অর্জুন এবং  সারা।

6. ইউনিসেফের গুডউইল অ্যাম্বাসাডর সচিন তেন্ডুলকর ভারত ও বিশ্বের শিশুদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন।


শচীন টেন্ডুলকার সম্পর্কে আরও কিছু মজার তথ্য জেনে নিন

1. 1973 সালের 24 এপ্রিল ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

2. মাত্র 11 বছর বয়সে ক্রিকেট খেলা শুরু করেন তিনি।

3. 15 নভেম্বর, 1989 তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার।

4. 18 ডিসেম্বর, 1989 তারিখে পাকিস্তানের বিপক্ষে ভারতের পক্ষে একদিনের আন্তর্জাতিকে অভিষেক ঘটে তার।

5.  16 নভেম্বর, 2013 তারিখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।

6. তাঁকে অনেকেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান বলে মনে করেন।

শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেটের অবিসংবাদিত কিংবদন্তী। তাঁর ব্যতিক্রমী প্রতিভা, অতুলনীয় রেকর্ড, অবিচল নিষ্ঠা এই ক্রীড়াঙ্গনে এক অমিট ছাপ ফেলে দিয়েছে। মাঠে তাঁর সাফল্য ছাড়াও তাঁর নম্রতা ও পরোপকার তাঁকে প্রকৃত আদর্শে পরিণত করে। শচীন টেন্ডুলকারের কাজ আগামী প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে।

আপনার মতামত জানান আমাদের কমেন্ট বক্সে। ও টেলিগ্রাম গ্রুপ জয়েন্ট করতে ভুলবেন না।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন