বেশি পরিমাণে হলুদের ব্যবহার আপনাকে ফেলতে পারে বড় সমস্যায়।
রান্নায় হলুদের ব্যবহার করা হয়। শুধু স্বাদের জন্য নয় এর আছে ঔষধি গুণাগুণ। যার কারণে আয়ুর্বেদিক বিভিন্ন চিকিৎসায় এর ব্যবহার আছে।
আবার ত্বকের পরিচর্যাতেও কাঁচা-হলুদ ব্যবহার হচ্ছে প্রাচীনকাল থেকে।
হলুদের এত গুণাগুণের মূল কারন কিন্তু ‘কারকিউমিন’, একটি উদ্ভিজ্জ রাসায়নিক উপাদান, যার আছে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিজেনের ক্ষমতা।
হাঁটুর ব্যথা , কোলেস্টেরল , হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে এবং ইরিটেবল বাউয়েল সিন্ড্রোম (IBS) এর অস্বস্তি কমাতে হলুদের অব্যর্থ কার্যকারিতা।
তবে সব জিনিসেরই উপকারিতার সঙ্গে কিছু অপকারিতাও থাকে। যেমন হলুদের ও কিছু অপকারিতা আছে।
তাই আমরা এখানে হলুদের কিছু অপকারিতা আপনার জন্য উপস্থাপন করেছি। দেখে নিন চটপট।
গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা:
হ্যাঁ এটা ঠিক যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে হলুদ বেশ উপকারী কিন্তু গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারীর ক্ষেত্রে রান্নায় থাকা হলুদ ই যথেষ্ট এবং নিরাপদ মাত্রা । কারণ রান্নার পর হলুদে কারকিউমিনের মাত্রা অনেকখানি কমে যায়।
তবে যদি আয়ুর্বেদিক ওষুধ হিসেবে ওইসময় হলুদ গ্রহণ করা হয় সেটা কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ হলুদ ঋতুস্রাব শুরু হতে সহায়তা করে এবং জরায়ুকেও উত্তেজিত করে। দুটাই গর্ভাবস্থায় ঝুঁকিপূর্ণ।
রক্ত অল্পতায় ভুগলে:
সাধারণত শরীরে পর্যাপ্ত আয়রনের অভাবে অ্যানেমিয়া বা রক্ত শূন্যতা দেখা দেয়। মূলত শরীর যখন পর্যাপ্ত লোহিত রক্তকণিকা তৈরি করতে পারে না কিংবা যতটুকু তৈরি করে তার থেকে বেশি পরিমাণে হারায় বা ধ্বংস হয়ে যায় সেই অবস্থাকেই ‘অ্যানেমিয়া’ বলা হয়।
রক্ত শূন্যতায় অধিকমাত্রায় হলুদ গ্রহণ করলে শরীরের খাবার থেকে আয়রন শোষণ করার ক্ষমতা কমে যাবে। যা অ্যানেমিয়া বা রক্তাল্পতার তীব্রতাকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।
রক্ত ক্ষরণের সমস্যা:
যাদের রক্ত ক্ষরণের সমস্যা আছে, অথবা রক্ত পাতলা করার জন্য ওষুধ খাচ্ছেন যারা, তাছাড়া নাক দিয়ে রক্ত পড়ে এমন প্রত্যেকের হলুদ খাওয়ায় সাবধানতাঅবলম্বন করতে হবে ।
অতিরিক্ত হলুদ গ্রহণ করে ফেললে রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা হারাতে পারে। যা কখনো কখনো যে কোনো রক্তপাত বন্ধ করাকে খুবই জটিল করে তুলতে পারে ।
ডায়াবেটিস রোগীদের :
একজন ডায়াবেটিস রোগীকে তার খাদ্যাভ্যাসের দিকে নজর অন্য সাধারণ ব্যক্তির থেকে অনেক বেশি রাখতে হয়। এবং এই নিয়ম মেনে চলতে হয় বাকি জীবনটা। রক্তে শর্করার মাত্রা বেশি হলে চলবে না, কমলেও বিপদ।
অন্যদিকে কারকিউমিন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে । তাই সতর্ক না হলে হলুদের কারণে রক্তে শর্করার মাত্রা অতিরিক্ত কমে গিয়ে মারাত্বক বিপদ হতে পারে।
বৃ্ক্কে পাথর:
সাধারণত বিভিন্ন খনিজ আর লবণ জমেই বৃক্কে পাথর সৃষ্টি হয়। এদের মধ্যে সবচাইতে বেশি যে খনিজটি সবচেয়ে বেশি সমস্যা করে তা হল ক্যালসিয়াম অক্সালেট।
আর হলুদে থাকে অক্সালেট সেটাও উচ্চমাত্রায়, যা ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বৃক্ক অর্থাৎ কিডনির পাথর তৈরি করতে খুবই সহায়ক ভূমিকা রাখে।
তাই যাদের বৃক্কে পাথর আছে অথবা আগে ছিল, তাদের হলুদ অল্প পরিমাণে খাওয়াই ভালো ।
পরিশেষে হলুদের নিরাপদ মাত্রা
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্যাস হিসেবে দিনে 500mg থেকে 2000mg অবধি হলুদ খাওয়া নিরাপদ। কারণ হলুদের নির্যাসে কারকিউমিনের মাত্রা কম হয়। (বলে রাখি 1gram = 1000mg )
2 থেকে 2.5mg হলুদের গুঁড়া রান্নায় ব্যবহার করা হলে তা থেকে কারকিউমিন পাবেন 60mg থেকে 100mg।
এতটুকুতে কারও কোনো অসুবিধা হবে না।
তবে হলুদ যদি আপনি সাপ্লিমেন্ট হিসেবে গ্রহণ করতে চান, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।