ক্যাপ্টেন ম্যাক্স ভন স্টেফানিত্জ
![]() |
Captain Max von Stephanitz |
প্রাথমিক জীবন
স্টেফানিত্জ জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যের ড্রেসডেনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন অশ্বারোহী অফিসার এবং একজন সম্ভ্রান্ত পরিবারের পুত্র ছিলেন।
স্টেফানিত্জ প্রতিষ্ঠিত পিফোরটা বোর্ডিং স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন, যেখানে তিনি শিক্ষা এবং খেলাধুলায় অসাধারণ ছিলেন।
পিফোরটা থেকে স্নাতক হওয়ার পর, স্টেফানিত্জ গটিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন, যেখানে তিনি কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
পেশা
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক হওয়ার পর স্টেফানিত্জ জার্মান অশ্বারোহী বাহিনীতে যোগ দেন। তিনি 10 বছর অশ্বারোহী বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময়ে তিনি ঘোড়া ও কুকুর সম্পর্কে মূল্যবান জ্ঞান অর্জন করেন। 1899 সালে, স্টেফানিত্জ কুকুর প্রজননের প্রতি তার আবেগ অনুধাবন করেন ও অশ্বারোহী বাহিনী থেকে পদত্যাগ করেন।
স্টেফানিত্জ সেইসময় যেসব পশুপালক কুকুর পাওয়া যেত, তাদের নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন।
তিনি বিশ্বাস করতেন যে এই কুকুরগুলি যথেষ্ট বুদ্ধিমান বা প্রশিক্ষণযোগ্য নয়।
স্টেফানিত্জ আরও বুদ্ধিমান, প্রশিক্ষণযোগ্য এবং অ্যাথলেটিক হবে এমন একটি নতুন প্রজাতির পশুপালক কুকুর তৈরি করতে শুরু করেন।
1899 সালে স্টেফানিত্জ জার্মানির কার্লসরুহেতে একটি কুকুর প্রদর্শনীতে অংশ নেন।
এই শোতে তিনি এমন একটি কুকুর দেখতে পান, যা তার নতুন প্রজাতির ভিত্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
কুকুরটা ছিল মাঝারি আকারের, ধূসর নেকড়ের মতো শক্ত পেশীবহুল বিল্ডের কুকুর।
স্টেফানিত্জ সেই কুকুরটি কিনে তার নাম রাখেন হোরান্ড ফন গ্রাফ্রাথ।
স্টেফানিত্জ অন্যান্য কুকুরের সাথে হোরান্ড ভন গ্রাফ্রাথের প্রজনন শুরু করেন, যার কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।
বেলজিয়াম, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি-সহ অন্যান্য দেশ থেকেও কুকুর আমদানি করা শুরু করেন তিনি।
এবং অবশেষে, বাছাই করা প্রজননের মাধ্যমে ফন স্টেফানিত্জ একটি নতুন জাত উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন, যাকে তিনি জার্মান শেফার্ড ডগ নামে অভিহিত করেন।
জার্মান শেফার্ড কুকুরটি দ্রুত জার্মানিতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে, এবং শীঘ্রই বিশ্বের অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়ে। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে যুক্তরাষ্ট্রে এই জাতটি প্রথম পরিচিত হয় এবং দ্রুতই এটি দেশের অন্যতম জনপ্রিয় জাত হয়ে ওঠে।
স্টেফানিত্জ জার্মান শেফার্ড ডগের প্রবল সমর্থক ছিলেন। তিনি এই প্রজাতি সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বই লিখেছিলেন এবং জার্মান শেফার্ড ডগ ক্লাব ভেরিন ফার ডয়েচে শেফারহুন্ডে (এসভি) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
এসভি এর আজও অস্তিত্বে রয়েছে, এবং এটি বিশ্বের বৃহত্তম জার্মান শেফার্ড ডগ ক্লাব।
স্টেফানিত্স 1936 সালে মারা যান। তাকে জার্মান শেফার্ড ডগ প্রজাতির কুকুরের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ক্যাপ্টেন ম্যাক্স ফন স্টেফানিত্জ সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য নিচে আছে:
1. স্টেফানিত্জ বুদ্ধিমত্তা এবং প্রশিক্ষণের জন্য প্রজননের গুরুত্বে দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে জার্মান শেফার্ড কুকুরের এই বৈশিষ্ট্যগুলি একটি কাজের কুকুরের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
2. স্টেফানিত্জ স্বাস্থ্য ও সুস্থতার জন্য প্রজননের গুরুত্বেও বিশ্বাস করতেন। তিনি এমন একটি কুকুরের জাত তৈরি করতে চেয়েছিলেন, যা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবে।
3. স্টেফানিত্সের প্রজনন কার্যক্রম সফল হয়েছিল। জার্মান শেফার্ড ডগ খুব দ্রুতই বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় প্রজাতির হয়ে ওঠে। এই জাতটি এখন বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা হয়, যার মধ্যে রয়েছে পশু পালন, পুলিশের কাজ, অনুসন্ধান ও উদ্ধার এবং থেরাপির কাজ।
4. স্টেফানিত্স একজন প্রকৃত দূরদর্শী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি জার্মান শেফার্ড কুকুরের সম্ভাবনা দেখেন এবং এই জাতটিকে বাস্তব রূপ দিতে নিরলসভাবে কাজ করেন। কুকুরের জগতে তাঁর কাজের স্থায়ী প্রভাব রয়েছে।
ক্যাপ্টেন ম্যাক্স ফন স্টেফানিত্জ সম্পর্কে কিছু অতিরিক্ত মজাদার তথ্য এখানে দেওয়া হল:
1. তিনি জার্মান অশ্বারোহী বাহিনীর সদস্য ছিলেন এবং ফ্রাঙ্কো-প্রুসিয়ান যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।
2. তিনি গটিংজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ছিলেন, যেখানে তিনি কৃষি ও পশুপালন বিষয়ে পড়াশোনা করেছিলেন।
3. তিনি জার্মান শেফার্ড ডগ ক্লাব, ভেরিন ফুর ডয়েচে শেফারহুন্ডে (এসভি) এর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন।
4. তিনি জার্মান শেফার্ড কুকুর সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বইয়ের লেখক ছিলেন, যার মধ্যে রয়েছে "Der Deutsche Schaferhund in Wort und Bild" (The German Shepherd Dog in Word and Image)।
5. তিনি জার্মান শেফার্ড কুকুরের একজন দৃঢ় সমর্থক ছিলেন এবং বিশ্বাস করতেন যে এই প্রজাতিটি সমাজের জন্য একটি মূল্যবান সম্পদ হতে পারে।
6. তিনি 1936 সালে মারা যান এবং জার্মানির ড্রেসডেনে তাকে সমাহিত করা হয়।
উপসংহার
ক্যাপ্টেন ম্যাক্স ফন স্টেফানিত্জ ছিলেন কুকুর প্রজননের জগতে একজন সত্যিকারের পথিকৃত্। তিনি জার্মান শেফার্ড কুকুরকে বহুমুখী এবং বুদ্ধিমান বংশে বিকশিত করেছিলেন যা আমরা আজ জানি। কুকুরের জগতে তাঁর কাজের স্থায়ী প্রভাব রয়েছে এবং তাঁর কাজ আগামী বহু বছর ধরে আমাদের কাজে আসবে।
