কিশোর কুমার : জীবনী , পুরস্কার ও উল্লেখযোগ্য কাজ | kishore kumar biography in bengali

1969 সালে, কিশোর কুমারকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছিল, যা ভারতের চতুর্থ-সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার।
কিশোর কুমারের সংক্ষিপ্ত জীবনী ও উল্লেখযোগ্য কাজের বিবরণ। 


কিশোর কুমার জন্ম নাম আভাস কুমার গাঙ্গুলী, ছিলেন একজন কিংবদন্তি ভারতীয় প্লেব্যাক গায়ক, অভিনেতা, গীতিকার, সুরকার, প্রযোজক, পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকার। তিনি ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পের অন্যতম বহুমুখী এবং আইকনিক শিল্পী ছিলেন, যিনি তার অনন্য কণ্ঠস্বর, শৈলী এবং হাস্যরসের জন্য পরিচিত। কিশোর কুমার 4 আগস্ট, 1929 সালে ভারতের মধ্য প্রদেশের খান্ডোয়াতে জন্মগ্রহণ করেন এবং 13 অক্টোবর, 1987 তারিখে ভারতের মহারাষ্ট্র, মুম্বাইতে মারা যান।

কিশোর কুমারের প্রথম জীবন ট্র্যাজেডি এবং সংগ্রামে ভড়া ছিল । তার বাবা, কুঞ্জলাল গাঙ্গুলী, একজন আইনজীবী ছিলেন এবং তার মা গৌরী দেবী ছিলেন একজন গৃহিনী। কিশোর কুমার চার ভাইবোনের মধ্যে কনিষ্ঠ ছিলেন এবং তার শৈশব দারিদ্র্য ও অসুস্থতায় কেটেছে। তা সত্ত্বেও, কিশোর কুমারের সঙ্গীতের প্রতি তার আগ্রহ ও আকর্ষন তাকে একজন স্ব-শিক্ষিত গায়ক হতে সাহায্য করেছিল। তিনি একা একাই দিদির সাহায্য নিয়ে হারমোনিয়াম এবং অন্যান্য বাদ্যযন্ত্র বাজানো শিখেছিলেন।

কিশোর কুমারের গায়ক হিসেবে পেশাগত জীবন শুরু হয় 1940 এর দশকে যখন তিনি মুম্বাইতে চলে আসেন এবং চলচ্চিত্রে কোরাস গায়ক হিসেবে কাজ শুরু করেন। তিনি "জিদ্দি" (1948) চলচ্চিত্রে গায়ক হিসেবে প্রথম সুযোগ পান, যা খুবই  হিট করে এবং সেখান থেকেই তার কর্মজীবন শুরু হয়। 
কিশোর কুমার হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, অসমীয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি এবং ওড়িয়া সহ বিভিন্ন ভাষায় 3,000 টিরও বেশি গান গেয়েছেন।

প্লেব্যাক সিংগার হিসেবে কিশোর কুমারের উল্লেখযোগ্য কিছু কাজের মধ্যে রয়েছে 

1. আরাধনা (1969) চলচ্চিত্রের  - মেরে স্বপ্নো কি রানি , 
2. আরাধনা (1969) চলচ্চিত্রের - রূপ তেরা মাস্তানা
3. চলতি কা নাম গাড়ি (1958) চলচ্চিত্রের  - এক লডকি ভেগি ভাগি সি
4. ডন (1978) চলচ্চিত্রের  - খাইকে পান বানারস ওয়ালা
5. কুদরত (1981) চলচ্চিত্রের - হুমে তুমসে পেয়ার কিতনা। 

এই পাঁচটি গান কিশোর কুমারের সর্বকালের জনপ্রিয় পাঁচটি গান। তবে তার স্বতন্ত্র কণ্ঠস্বর এবং শৈলী তাকে ভারতের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং প্রিয় গায়কদের একজন করে তুলেছে।

শুধু গান নয়, একজন অভিনেতা হিসেবেও  কিশোর কুমারের সফল ক্যারিয়ার ছিল। ৯০টিরও বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন কিশোর কুমার। 

অভিনেতা হিসেবে তার উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে :

1. চলতি কা নাম গাড়ি (1958)
2. হাফ টিকেট (1962)
3.পরোসান (1968), 

তিনি তার কমিক টাইমিং এবং চালু স্টেজে সেটে ইম্প্রোভাইজেশন করার ক্ষমতার জন্য পরিচিত ছিলেন।

কিশোর কুমার শুধুমাত্র একজন প্রতিভাবান গায়ক এবং অভিনেতাই ছিলেন না বরং একজন প্রতিভাবান সুরকার, প্রযোজক, পরিচালক এবং চিত্রনাট্যকারও ছিলেন। তিনি "দূর গগন কি ছাওঁ মে" (1964) সহ বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রের জন্য সঙ্গীত রচনা করেছিলেন, যেটির জন্য তিনি প্রযোজনা, পরিচালনা এবং চিত্রনাট্যও লিখেছেন। এছাড়াও তিনি "চলতি কা নাম গাড়ি" (1958), "হাফ টিকেট" (1962), এবং "বধতি কা নাম দধি" (1974) এর মতো চলচ্চিত্র পরিচালনা ও প্রযোজনা করেন।

কিশোর কুমার তার সমগ্র কর্মজীবনে ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে তার অবদানের জন্য অসংখ্য পুরস্কার এবং সম্মান পেয়েছেন। 

এখানে কিশোর কুমারের পুরস্কার এবং সম্মাননা তারিখ সহ তুুলে ধরা হলো :  

1. ফিল্মফেয়ার 
কিশোর কুমার শ্রেষ্ঠ মেল প্লেব্যাক গায়কের জন্য মোট 8 টি (আটটি) ফিল্মফেয়ার পুরস্কার জিতেছেন। 
 
1969: "আরাধনা" চলচ্চিত্রের "রূপ তেরা মাস্তানা"
 1973: "আপ কি কসম" ফিল্ম থেকে "জিন্দেগি কে সফর মে"
 1975: "অমানুষ" চলচ্চিত্রের "দিল আইসা কিসি নে মেরা তোদা"
 1976: "আঁধি" চলচ্চিত্রের "তেরে বিনা জিন্দেগি সে"
 1977: "কাভি কাভি" চলচ্চিত্রের "কাভি কাভি মেরে দিল মে"
 1979: "থোডিসি বেওয়াফাই" চলচ্চিত্রের "হাজার রাহেন মুরকে দেখেন"
 1981: "নমক হালাল" চলচ্চিত্রের "পাগ ঘুংরু বাঁধ"
 1983: "আগার তুম না হোতে" চলচ্চিত্র থেকে "আগার তুম না হোতে"

2. জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার 
কিশোর কুমার তার কর্মজীবনে দুটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতেছেন। 
 
1975: "অমানুষ" ছবির "দিল আইসা কিসি নে মেরা তোদা" গানের জন্য সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়ক।
 1984: "শারাবি" চলচ্চিত্রের "মঞ্জিলীন আপনি জাগাহ হ্যায়" গানের জন্য সেরা পুরুষ প্লেব্যাক গায়ক।
 
3. লতা মঙ্গেশকর পুরস্কার
1999 সালে কিশোর কুমারকে মরণোত্তর লতা মঙ্গেশকর পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ভারতীয় সঙ্গীতে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ মধ্যপ্রদেশ সরকার তাকে এই পুরস্কার প্রদান করে।

4. পদ্মশ্রী 
1969 সালে, কিশোর কুমারকে পদ্মশ্রী দেওয়া হয়েছিল, যা ভারতের চতুর্থ-সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্পে তার অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়।

ভারতীয় সঙ্গীত ও সিনেমায় কিশোর কুমারের অবদান আজও পালিত এবং স্মরণ করা হয়। তার অনন্য কণ্ঠস্বর, শৈলী এবং হাস্যরস তাকে ভারতীয় সংস্কৃতিতে একটি প্রিয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। কিশোর কুমার ভারত সহ সারা বিশ্বের শিল্পী এবং সঙ্গীতপ্রেমীদের অনুপ্রাণিত করেছে। তিনি একজন সত্যিকারের আইকন ছিলেন যিনি তার প্রতিভা, হাস্যরস এবং সঙ্গীত এবং সিনেমার প্রতি আবেগ দিয়ে সীমানা অতিক্রম করেছিলেন। ভারতীয় চলচ্চিত্র শিল্প এবং সংস্কৃতিতে তার অবদান সর্বদা স্মরণ করা হবে এবং উদযাপন করা হবে।

আপনার মতামত জানতে আমরা আগ্রহী। কমেন্টে আপনার মতামত জানান।  ও নিচে নিউসলেটার আছে সাবস্ক্রাইব করে নেবেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন