সিংহ সম্পর্কে অজানা তথ্য ও সিংহের বৈশিষ্ট্য মজাদার ফ্যাক্ট

বনের রাজা হিংস্র প্রানী সিংহ সম্পর্কে আপনি কি কি জানেন ? 

বনের রাজা সিংহ

আজ আপনার জন্য আমাদের উপস্থাপন বনের রাজা সিংহ সম্পর্কে অবাক করা অজানা মজাদার তথ্য বা ফ্যাক্ট। আর সময় নষ্ট না করে নিচে আপনার জন্য লেখা মজাদার ফ্যাক্ট গুলো তারাতারি পড়তে থাকুন। 

১.  বাঘ ও সিংহের চারিত্রিক পার্থক্য 

পশুরাজ সিংহ বন্য হিংস্র প্রানী গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রাণী। অনেকের ধারণা সিংহের তুলনায় বাঘ বেশি শক্তিশালী। হতে পারে, তবে লড়াই জেতার প্রধান কারন শক্তি নয়। ইচ্ছাশক্তি বা বলা ভালো মানসিকতা। বিপদ বুঝলে বাঘ নিজের হার স্বীকার করে অন্যত্র চলে যাবে, কিন্ত সিংহ খুবই জেদি প্রানী। সে আমরন লড়াই করবে। এমনকি লড়াই করতে করতে বহু সিংহ বীরের মতো মারাও যায়। এমন নজির কিন্ত বাঘের নেই। বাঘ পেছন থেকে আচমকাই হামলা করে ও যতক্ষণ পাল্লা ভাড়ি থাকে লড়াই করে, বিপদ বুঝলে কেটে পড়ে।

এইকারনেই একটি সমীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায় যে, সিংহের থেকে বেশি শক্তিশালী বাঘ বেশিরভাগ সময়ই সিংহের কাছে পরাজিত হয়। 
তবে বাস্তবতা অনেকটা আলাদা। বাঘ সিংহ কখনোই এক অঞ্চলে একসাথে কিংবা পাশাপাশি বসবাস করে না। বাঘ সাধারণত জলাধার বা জলাভুমির বাসিন্দা অপরদিকে সিংহের বাসস্থান শুষ্ক ও বিস্তীর্ণ প্রান্তর।

যদি কোন এলাকায় এরা ভুলবশত পাশাপাশি থেকেও থাকে তবে সে অঞ্চলে শুধুমাত্র একজনই টিকতে পারে। 

রয়েল বেঙ্গল টাইগার সাধারণত সুন্দরবনের দেখতে পাওয়া যায়। তাছাড়াও বিশ্বের অন্যান্য দেশে বেঙ্গল টাইগারের অন্যান্য কিছু প্রজাতির দেখা মিললেও প্রকৃতপক্ষে ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এদের প্রধান আবাসস্থল। বাংলাদেশ এবং ভারত দুটি দেশ মিলে সুন্দরবন ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট অবস্থিত। 
আর এই কারনেই আমরা বাঘ এবং সিংহের লড়াই খুবই কম দেখতে পাই।

২. সিংহের শিকার করা ও খাবার খাওয়া

জীবন বিজ্ঞানের খাদ্যশৃঙ্খলে যে কোন হিংস্র প্রাণীকেই খাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।  প্রজাতি এবং বৈশিষ্ট্য ভেদে প্রাণীগুলির খাবারের কিছুটা তারতম্য লক্ষ্য করা যায়। যা সেই প্রাণীগুলির মৌলিক কিছু বৈশিষ্ট্যের উপর গুরুতর প্রভাব ফেলে। 

যদি সিংহের কথা বলি, একটি প্রাপ্তবয়স্ক সিংহের ওজন প্রায় দেড়শ থেকে ১৭০ কেজি মতো হয়, কিন্তু অবাক করার বিষয় একটা সিংহ একবারে তার শরীরের ওজনের প্রায় চার ভাগের একভাগ খাবার খেয়ে নিতে পারে। একবারে একটা সিংহের জন্য ৪০ কেজি খাবার খাওয়া কোন ব্যাপার না। 

সেই সঙ্গে সিংহের জিব্বা অনেকটা তাদের এই কাজে সাহায্য করে। সিংহের জিব্বা কিছুটা চেঁটানো এবং খসখসে প্রকৃতির। আর এই কারণেই সিংহ সম্পূর্ণ অনায়াসে যেকোনো প্রাণীর মাংস এবং হাড় গুড়ো গুড়ো করে ফেলতে পারে তাদের কোনো অসুবিধা হয় না।

৩. প্রতিকূল পরিবেশে শিকার সিংহের খুব প্রিয় 

স্বাভাবিকভাবে পরিবেশ যখন খারাপ হয় তখন যে কোন প্রাণী নিজেদের ঘরে ফেরা সিদ্ধান্ত নেয় এবং শিকার বন্ধ রাখে। তারা তাদের বাসায় অন্যান্য সদস্যের সাথে প্রতিকূল পরিবেশ ঠিক হওয়ার অপেক্ষা করে। কিন্তু সিংহের জন্য ব্যাপারটা পুরোপুরি আলাদা। সিংহ প্রতিকূল পরিবেশেই শিকার করতে বেশি পছন্দ করে। 

সিংহ একমাত্র প্রাণী যে ঝড়ের মধ্যে শিকার করতে বের হয় এবং খারাপ আবহাওয়ার সুবিধা নিয়ে শিকারকে একেবারে কাবু করে ধরে ফেলে। 

তবে শিকার করার দায়িত্ব সিংহের নয় সিংহীর ( মেয়ে সিংহ )। পুরুষ সিংহের দায়িত্ব নিজেদের এলাকা ঠিক রাখা, অন্য এলাকা থেকে কোনও সিংহ আসলে তার সাথে বোঝাপড়া করা এবং তাদের দলের সদস্যকে সুরক্ষা দেওয়া। অপরদিকে, মহিলা সিংহের দায়িত্ব বাচ্চা লালন পালন করা ও শিকার করা। যখন খুবই খাদ্য সংকট দেখা দেয়, তখন অবশ্য পুরুষ সিংহ অন্য এলাকায় শিকার করে দলের অন্য সদস্যদের খিদে মেটায়। 

সিংহ বেশিরভাগ  সময় রাতেই শিকার করে তাই এদের নিশাচর নিয়ে বললেও খুব ভুল বলা হবে না।

৪.সিংহের একতা ও দলবদ্ধতা বনাম হিংস্রতা

সিংহ সাধারণত দলবদ্ধভাবেই চলাফেরা করতে পছন্দ করে অনেকটা রাজার মত। একা একা চলাচল করতে তাদের মোটেও পছন্দ না এবং যখন এরা হুংকার দেয় তখনো এরা একা একা হুংকার দেয় না দলবদ্ধ হয়েই হুংকার দেয়। সিংহের হুংকার কে সিংহের গর্জন বলা হয় যা জগৎবিখ্যাত।

৫. সিংহের বাচ্চা প্রতিপালন ও সামাজিকতা

বেশিরভাগ প্রাণীর বাচ্চারা  আলাদা আলাদা বড় হয় কিন্তু সিংহের বেলায় পুরোপুরি আলাদা। সিংহের মধ্যে বিশেষ সামাজিকতার লক্ষণ দেখা যায় যা তাদের অন্য প্রানিদের থেকে আলাদা করে।  

চার পাঁচটা সিংহের প্রায় ১০-১২ টা বা তারও বেশি বাচ্চা একইসঙ্গে হেসে খেলে বড় হয় একই জায়গায়। এমন জিনিস প্রাণীদের মধ্যে বিশেষ দেখা যায় না। এবং তাদের সেই চার পাঁচ জন সিংহ একসঙ্গে শিকার করতে যায় এবং শিকারে যা মিলে সবাই ভাগ যোগ করে খায়। এবং একসাথেই থাকে, ধীরে ধীরে যখন বাচ্চারা বড় হয়ে ওঠে তখন তারা তাদের জায়গা নেয় আর যুবক সিংহেরা রিটায়ার হয়ে স্বাচ্ছন্দের জীবন কাটায়।

এছাড়াও আরো অনেক মজাদার ও অবাক করা বাংলা অজানা তথ্য বা ফ্যাক্ট বাকি রয়ে গেল যা অন্য কোন সময় অন্য কোন প্রতিবেদনে আপনাদের জানানো হবে। ততক্ষন পেজটি বুকমার্ক করে রাখুন ও ক্রমে শর্টকাট সেভ করে রাখুন।

সিংহ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন উত্তর

১.সুন্দরবনে কি সিংহ আছে ?

না সুন্দর বনে কোনও সিংহ নেই।

২. সিংহ কত বছর বাঁচে ?

সিংহের গড় আয়ু ১৩ বছর

৩. সিংহ কেন বনের রাজা ?

 পুরুষ সিংহরা খুব রাগী হয়। এরা এদের এলাকা রক্ষার্থে প্রয়োজনে সহিংস লড়াই করে। এ কারণে সিংহকে বনের রাজা বলা হয়।

৪. ভারতীয় সিংহ কোন অরণ্যে দেখা যায় ?

ভারতীয় সিংহগুলি কেবলমাত্র ভারতের গুজরাতে গীর বনে পাওয়া যায়। সেখানে এই সিংহগুলি ভারতীয় সিংহ বা পার্শিয়ান সিংহ নামেও পরিচিত।

৫. কত প্রকার সিংহ আছে ?

সিংহের বর্তমানে দুটি প্রজাতি আছে। একটি আফ্রিকান সিংহ অপরটি এশীয় সিংহ

৬. সিংহ কোথায় দেখা যায় ?

আফ্রিকান সিংহ মোটামুটি আফ্রিকার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে পাওয়া যায়। আর  অল্প সংখ্যক ভারতীয় সিংহ শুধু ভারতের গির অভয়ারণ্যে পাওয়া যায়


আপনার মতামত জানতে আমরা আগ্রহী তাই একটি মন্তব্য করুন, যাতে আমরা এই বিষয়ে আপনার মতামত জানতে পারি।

এই নিবন্ধটি আপনার বন্ধুদের এবং পরিবারের সাথে শেয়ার করুন  তাঁদের এই বিষয়ের জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করার জন্য।

আমাদের fb page এ  follow করুন ও আমাদের সঙ্গে যুক্ত থাকুন।

إرسال تعليق