খুবই পরিচিত ছয়টি বিষাক্ত ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই দেখে নিন।
ভালোবেসে হোক অথবা প্রয়োজনে, আমাদের রোজকার খাদ্যতালিকায় ফল থাকবেই থাকবে। রোগীর পথ্য থেকে শুরু করে ডায়েটিং, নিত্য দিনের ব্রেকফাস্ট থেকে শুরু করে খাবার শেষের লোভনীয় ডেজার্ট - সর্বঘটে শুধু কাঠালী কলাই নয়, সবরকম ফলেরই কম বেশি অস্তিত্ব রয়েছে। কিন্তু আপাত নিরীহ বেশ কিছু ফল আছে যা সত্যিই মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত ঘটাতে পারে।
আলমন্ড বা কাঠ বাদাম:
আলমন্ড এমন একটি ড্রাই ফ্রুট যা বিভিন্ন খাবারের পদ তৈরি করতে ব্যবহৃত হয়। কেক, পায়েস বা অন্যান্য ডেজার্ট বানাতে আবার কখনো কখনো আমাদের রোজকার রান্নাতেও বাদামের ব্যবহার করা হয়। অসাধারণ ফ্লেভার এবং অ্যারোমার জন্যই বিখ্যাত এই বাদাম। আমরা যে আলমন্ড খাই তা মূলত বিটার আলমন্ড থেকে বিভিন্ন প্রসেসিং এর মাধ্যমে তৈরি করা হয়। এই বিটার আলমন্ডে প্রচুর পরিমাণ সায়ানাইড উপস্থিত থাকে যা আমাদের জন্য ভয়ঙ্কর ক্ষতিকারক। হিট ট্রিটমেন্ট এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে সায়ানাইড এবং ব্যাক্টেরিয়া অপসারণ করে আলমন্ড বাজারে আসে। নিজিল্যান্ড এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কিছু জায়গায় বিটার আলমন্ড বিক্রি করা আইনত নিষিদ্ধ।
কাজু বাদাম:
কাঠ বাদামের মত কাজু বাদামও কাঁচা অবস্থায় যথেষ্ট বিষাক্ত। কাঁচা কাজু বাদামে urushiol নামক এক প্রকার বিষাক্ত রাসায়নিক উপস্থিত থাকে। এই urushiol অত্যধিক পরিমাণে শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রভাবে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু কাঁচা কাজুবাদাম আগুনে রোস্ট করে নিলে এই ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থটি নষ্ট হয়ে যায়। তাই পরের বার থেকে কাজু বাদাম খাওয়ার সময় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যাতে সেটি কাঁচা না হয়।
চেরি:
আট থেকে আশি সকলের প্রিয় এই ফলটি কেক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ডেজার্ট পদ তৈরি করতে প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়। এমনকি বহু সময় কাঁচা চেরীও ফল হিসাবে খাওয়া হয়। কিন্তু এই ফলের বীজে হাইড্রোজেন সায়ানাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিক উপস্থিত থাকে, যার প্রভাবে মাথা ব্যাথা, উদ্বেগ এবং স্নায়ুতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। অত্যধিক পরিমাণে হাইড্রোজেন সায়ানাইড আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে তার প্রভাবে শ্বাস কষ্ট, উচ্চ রক্তচাপ যেমন হতে পারে, তেমনই হৃদস্পন্দনের গতি বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কিডনি বিকল পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।
টমেটো:
অ্যান্টি অক্সিডেন্টে ভরপুর টমেটো যে বিষাক্ত হতে পারে, এ কথা ভাবাই যায় না। সত্যি কথা বলতে কী, টমেটো ফলের কথা যদি ধরা যায় তাহলে তা আমাদের জন্য মোটেই ক্ষতিকারক নয়, কিন্তু টমেটো গাছের পাতা এবং কান্ড তে glycoalkaloid এর উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায় যার প্রভাবে স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যা এবং পেট খারাপ হতে পারে।
অ্যাপ্রিকট :
অসাধারণ স্বাদের এই মিষ্টি ফলটি জ্যাম জেলি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চেরীর মতই এরও বীজে amygdalin নামে ক্ষতিকারক একটি রাসায়নিক পদার্থ উপস্থিত আছে যা cyanogenic glycoside। এর প্রভাবে জ্বর, বমি বমি ভাব, মাথা ব্যাথা, দুর্বলতা এবং শরীরের বিভিন্ন জয়েন্টে ব্যথার উপসর্গ দেখা যেতে পারে।
আপেল:
"An apple a day keeps a doctor away". কিন্তু ডাক্তারদের প্রিয় এই ফলটির বীজে রয়েছে সাংঘাতিক সায়ানাইড। প্রচুর পরিমাণে আপেলের বীজ খেয়ে নিলে তা মানুষের মৃত্যুর কারণ পর্যন্ত হতে পারে। তাই, পরের বার থেকে কোনো ফল খাওয়ার আগে অবশ্যই লক্ষ্য রাখুন যে শুধু ফলটাই খাচ্ছেন তো, না কি ভুল করে তার বীজ বা অন্য কোনো অংশ খেয়ে ফেলে নিজের অজান্তেই নিজের শরীরে সায়ানাইডের মতো বিষাক্ত রাসায়নিকের প্রবেশ ঘটতে দিচ্ছেন।